একটি ঐতিহাসিক দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়ার ঐতিহ্যের সুবাদে আম আদমী পার্টি দায়বদ্ধতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করে। জনগণ স্থিতাবস্থার প্রতি এবং আমাদের রাজনীতির স্বজনপোষী, বংশানুক্রমিক, দুর্নীতিগ্রস্ত, দুর্বৃত্তায়িত ও সাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন; এবং ‘আপ’-এর উত্থান এই পরিপ্রেক্ষিতে হয়ে উঠেছিল এক ঝলক তাজা হওয়ার মতোই আনন্দদায়ক। ভারতবর্ষে আম আদমী পার্টির অনন্য হয়ে ওঠার, এবং সৎ ও বিকল্প রাজনীতির সঙ্গে সমার্থক হয়ে ওঠার কতকগুলি কারণ রয়েছে:
২০১১ সালের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের রাজনৈতিক উত্তরসূরী হিসেবে এই দলের মূল্যবোধের ভিত্তি এবং এর অস্তিত্বের অন্যতম কারণই হল রাজনীতি ও সরকার থেকে দুর্নীতির অপসারণ। আম আদমী পার্টিই একমাত্র রাজনৈতিক দল যা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চের সমর্থন জানায়, প্রত্যক্ষভাবে সেই আদর্শ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে, এবং এই আনুগত্যকে সম্মানজনক বলে মনে করে— এর নেতৃবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ভীতি প্রদর্শন ও গভীর ব্যক্তিগত ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েও এই অবস্থান থেকে সরে আসছেন না।
২০১৫ সালে দিল্লি নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ের পর ‘আপ’ সরকার জনগণের অধিকার সুনিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিপজ্জনক ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, এবং অনিবার্যভাবে দিল্লিতে রাজত্ব কায়েম করে রাখা একাধিক মাফিয়া গোষ্ঠীকে পরাস্ত করে— জল ট্যাঙ্কার মাফিয়া, কন্ট্রাকটর মাফিয়া, শক্তি সরবরাহ কোম্পানির মাফিয়া, বেসরকারি স্কুল/ কলেজ মাফিয়া ইত্যাদি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিশনের একটি রিপোর্টে বলা হয় যে, দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ ৮১% হ্রাস পেয়েছে।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আম আদমী পার্টি ভারতবর্ষে নির্বাচনী অর্থ সংগ্রহে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার মাইলফলক স্থাপন করেছে। ‘আপ’-ই হলো একমাত্র দল যা নির্বাচন কমিশন ও আয়কর বিভাগকে তাদের প্রত্যেক অর্থদাতার পরিচয় জানায়, যদিও আইন অনুযায়ী কেবলমাত্র ২০০০ টাকার বেশি অর্থ সাহায্যকারীদের পরিচয় জানানোই আবশ্যক। আম আদমী পার্টির গৃহীত অনুদানের ৯২ শতাংশ চেক এবং বৈদ্যুতিক মাধ্যমে জ্ঞাত উৎস থেকে প্রাপ্ত। অবশিষ্ট ৮% অর্থ ক্ষুদ্র নগদ অনুদান হিসেবে সংগৃহীত হয়ে ব্যাঙ্কে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে জমা হয়।
অন্যদিকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের প্রতিবেদন অনুযায়ী:
▪️ ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সংগৃহীত অর্থের মাত্র ৩০% জ্ঞাত উৎস থেকে আসে এবং ৬৩% আসে নগদ অর্থ হিসেবে।
▪️ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সংগৃহীত অর্থের মাত্র ১৭% জ্ঞাত উৎস থেকে প্রাপ্ত।
▪️ ভারতীয় জনতা পার্টির সংগৃহীত অর্থের মাত্র ৩৫% জ্ঞাত উৎস থেকে প্রাপ্ত।
আম আদমী পার্টি ভারতবর্ষের প্রাচীন বহুত্ববাদী সংস্কৃতি এবং আধুনিক ভারতের দৃঢ় ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার আদর্শের অনুসারী। এই দল সংখ্যাগুরুবাদকে সর্বথা প্রত্যাখ্যান করে এবং ভারতের সংবিধানে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এই দল তোষণবাদ ও ‘ভোট ব্যাঙ্কের’ রাজনীতিকেও প্রত্যাখ্যান করে। ভারতের প্রত্যেক নাগরিক সরকারের দৃষ্টিতে সমান। এই দল বিশ্বাস করে যে, যেখানেই অসাম্যের চিহ্ন বর্তমান এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় বঞ্চিত রয়েছেন, সেই সমস্ত অঞ্চলেই সবার কাছে সমান সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করতে হবে। জীবনে যাঁরা কম পেয়েছেন, আইনে তাঁদের জন্য অধিক বন্দোবস্ত রাখতেই হবে।
দিল্লিতে আম আদমী পার্টির প্রশাসনিক খতিয়ান এই দলের জনমুখী এজেন্ডার পক্ষেই সওয়াল করে। জীবনদায়ী জল বিনামূল্যে সরবরাহ করা, মহানগরে আন্তর্জাতিক প্রশংসা প্রাপ্ত এবং ভারতবর্ষের প্রথম ত্রিস্তরীয় সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার মডেল নির্মাণ করা, সরকারি স্কুলে শিক্ষাদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা, দেশের মধ্যে ন্যূনতম মজুরিকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কর্মসূচি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানুষের স্বার্থকে সর্বদা অন্য যে কোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। এই দলের এজেন্ডা কোনোদিন কোনো স্তরে সংকীর্ণ স্বার্থের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে না।
ভিআইপি সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান
আম আদমী পার্টিই ভারতের প্রথম রাজনৈতিক দল, যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রীদের গাড়িতে লালবাতি লাগানোর প্রথা অস্বীকার করে। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ক্যাবিনেট তাঁদের সরকারি যানবাহনে লালবাতির ব্যবহার বন্ধ করে নজির স্থাপন করেন। এই নজির অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও দল তাবৎ অনুসরণ করে চলেছেন।
দিল্লির প্রত্যেক মন্ত্রী নিজস্ব বাসভবনে প্রতি সপ্তাহে সোম থেকে শুক্রবার, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে জনগণের যাবতীয় নিবেদন ও অভিযোগ শুনতে তৈরি থাকেন।
বংশানুক্রমিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
আম আদমী পার্টির সংবিধান একই পরিবারের দুইজন সদস্যকে নির্বাচনে লড়তে অথবা দলের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী শাখায় কোনো পদ অধিকার করতে নিষেধ করে। ‘আপ’ বিশ্বাস করে যে, দশকের পর দশক কয়েকটি রাজনৈতিক বংশ গোটা গোটা দল ও সরকারকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, যার ফলে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠাতাদের গণতান্ত্রিক আদর্শ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
© 2022 AAP WB
This website uses cookies to provide you with the best browsing experience.